উড়াল সড়কের মগবাজার অংশের কাজ শুরু হচ্ছে
০১ জুলাই ২০২৫,
বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জট খুলছে। মগবাজার অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এবার সেই অংশের কাজ শুরু হয়েছে। তবে হাতিরঝিল-বুয়েট লিংকের জট খোলেনি। বাংলাদেশ গাছরক্ষা আন্দোলন লিখিতভাবে অসঙ্গতি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। এর জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের সম্পূর্ণ অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
Time -9:22
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। উড়াল সড়কের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ গাছরক্ষা আন্দোলনের নামে কিছু ব্যক্তির আপত্তি আছে। পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিলের ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয় সেখানে। তাই এ অংশটুকু বাতিলের দাবি জানানো হয়। এর সপক্ষে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জবাবে বলেছে- পরিবেশগত সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার তথ্যটি সঠিক নয়। বলা হয়েছে, বর্তমানে পান্থকুঞ্জ পার্কের মোট আয়তন ৫.০১ একর। এর মধ্যে এ প্রকল্পের আপ র্যাম্পের জন্য ০.৪৯ একর এবং বুয়েট লিঙ্কের জন্য ০.৩৭ একর জায়গাসহ মোট ০.৮৬ একর জমির প্রয়োজন হবে। পার্কের অবশিষ্ট ৪.১৫ একর ফাঁকা জায়গা হিসেবেই থাকবে। প্রকল্পের যে লিংকটি পান্থকুঞ্জ পার্ক থেকে পলাশী পর্যন্ত গেছে, সে অ্যালাইনমেন্ট বরাবর পান্থকুঞ্জ পার্কের ছোট-বড় মোট ২৫৮টি গাছ বন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে কর্তন করা হয়েছে। কাজ শেষে সেখানে গাছ লাগানো হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের কমলাপুর এলাকায় স্টেকইয়ার্ড নির্মাণের জন্য রেলওয়ে থেকে ৩.২৮ একর জমি গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদার সেখানে গার্ডার নির্মাণ করছে। প্রকল্প শেষ হলে পান্থকুঞ্জের মতো পার্ক নির্মাণ করা হবে সেখানে। এ ক্ষেত্রে পান্থকুঞ্জ পার্কসহ কমলাপুর এলাকায় মোট ৭.৪৩ একর জায়গায় পার্কসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে। আর হাতিরঝিলের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখতে নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে হাতিরঝিলসহ পান্থকুঞ্জ পার্কের মধ্যে বেশ কিছু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের জবাবে সতর্ক করে বলা হয়েছে- প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট সংশোধন করা হলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে এ অংশের সম্পাদিত কাজের নির্মাণ ব্যয়সহ ২৫ বছরের ট্রাফিক ক্ষতির অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে বহন করতে হবে। অধিকন্তু আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হতে পারে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস আমাদের সময়কে বলেন, মগবাজার রেলক্রসিং থেকে অবশিষ্ট অংশের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। আর কোনো জটিলতা নেই। আর পান্থকুঞ্জ অংশের কয়েকটি গাছ কর্তনশেষে পুনরায় রোপণ করা হবে। বরং আরও বেশি গাছ রোপণ হবে। কমলাপুর এলাকাতেও পার্ক থাকবে। বরং আগের চেয়ে পার্কের পরিমাণ বাড়বে।
সেতু বিভাগ বলছে, সোনারগাঁও-বুয়েট লিংকটি প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার দক্ষিণাংশ অর্থাৎ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল, ইডেন মহিলা কলেজ, নিউ মার্কেট, আজিমপুরসহ পুরান ঢাকার জনগণের অসহনীয় যানজট কমাতে সাহায্য করবে। পলাশী সংযোগ সড়ক বাতিলের বিষয়ে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে পরিবেশগত ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। তবে সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছেÑ পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে উড়াল সড়ক প্রকল্পটি। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডার হচ্ছেÑ চায়না শ্যাংডং ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ, সিনোহাইড্রো লিমিটেড ও ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ছয়টি কিস্তিতে ৩০৫.৫৫ ডলার সমমূল্য ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা দেবে। নির্মাণকালে তিনটি ও অপারেশনকালে তিনটি সমান কিস্তি পরিশোধ করার কথা। এরই মধ্যে প্রথম কিস্তি বাবদ ৫০.৯২ ডলার পরিশোধ হয়েছে। বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উন্মুক্ত হয়েছে ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এবং ২০২৪ সালের ২০ মার্চ এফডিসি রেলগেইট সংলগ্ন ডাউন র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে গত ২৯ জুন পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ২৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ৩ কোটি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫২টি গাড়ি চলাচল করেছে এ সময়ে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৫.২৫৮%।